স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার উত্তরার এক বাসায় তাইওয়ানের এক ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী তাদের প্রতিষ্ঠানের ‘সাবেক কর্মচারীর হামলায়’ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, হামলাকারীরা ওই বাসা থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তারও করেছে। দুই বিদেশি নাগরিক খুন ও তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যার দুটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে নগরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যেই শুক্রবার প্রথম প্রহরে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে গতকাল শুক্রবার বিকালে। আহত ব্যবসায়ী ওয়াং মিং চি (৫৪) এবং তার স্ত্রী লিও লি হুয়া’কে (৫০) ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুজনেই মাথায় আঘাত পেয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায়
কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সমির হাসিব সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৪/এ রোডের ৮ নম্বর চতুর্থ তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। তারা হলেন, ওয়াং মিং চি (৬৮) ও তার স্ত্রী লিলিহুয়া (৬০)। ভবনটির নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলায় তাদের অফিসকক্ষ।
ম্যানেজার বলেন, রাতে তিনজন লোক ওই ফ্লাটে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে একজনের মুখোশ পরা ছিল। অন্য দুজন কারখানায় কন্টাকে কাজ করত। তারা হলেন রাজু ও সাজু। তাদের চিনে ফেলায় ওই দম্পতির ওপর হামলা চালায় বলে রাতে তাকে ফোনে জানিয়েছিলেন লিলিহুয়া। তদের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে এবং তারা তাইওয়ানে থাকেন। হামলার খবর পেয়ে তারা বাংলাদেশে আসছেন বলেও জানান তিনি।
এই দম্পতি বাংলাদেশে আছে প্রায় দশ বছর ধরে। গাজীপুরের গাছা এলাকায় জিন জিং ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড নামে তাদের একটি কারখানা আছে, যেখানে পিভিসি ডোর ও সিলিং তৈরি করা হয়। ওয়াং মিং চি ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার স্ত্রীও এর একজন পরিচালক।
কারখানার ব্যবস্থাপক (জিএম) শামির হাসিব বলছেন, ওই দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ক্ষত দেখে তার মনে হয়েছে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি, হাসপাতালও কোনো তথ্য দেয়নি।
মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে তার নাম জাহাঙ্গীর। তার শ্যালক সাজু একসময় তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ীর কর্মচারী ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি ওই কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহের কাজ শুরু করেন।
সে কারণে ওয়াং মিং চি’র উত্তরার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল সাজুর। তার কাছে ওই বাসার একটি চাবিও ছিল বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। “ব্যবসার টাকা-পয়সা বকেয়া নিয়ে কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ী টাকা তুলেছেন খবর পেয়ে সাজু, জাহাঙ্গীরসহ তিনজন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওই বাসায় ঢোকে। তারপর ওই দম্পতিকে মারধর করে ছয় লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়।”
পরে পুলিশ খবর পেয়ে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং গতকাল শুক্রবার ভোরের দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে বলে মুনতাসিরুল ইসলাম জানান।
শামির হাসিব জানান, উত্তরার ৪ নম্বরে চারতলা একটি ভবনের তৃতীয় তলায় তাইওয়ানের ওই দম্পতির বাসা। আর নিচতলায় জিন জিং ইয়াং কোম্পানির প্রধান কার্যালয়। বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরে কারখানায় যান ওয়াং মিং চি এবং তার স্ত্রী লিও লি হুয়া। কাজ সেরে রাতে বাসায় ফিরে তারা হামলার শিকার হন। রাতে ওই ভবনের এক বাসিন্দার কাছ থেকে হাসিব খবর পান, তিনজন সশস্ত্র ‘দুর্বৃত্তের হামলায়’ তার কোম্পানির মালিক আহত হয়েছেন।
খবর পেয়ে উত্তরায় গিয়ে তিনি দেখেন, পুলিশ ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তিনিও তাদের সঙ্গে হাসপাতালে যান। শামির হাসিব শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, “দেখে মনে হয়েছে তাদের চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। স্যারের আঘাত একটু বেশি। উনি আইসিইউতে আছেন। আর ম্যাডামকে বিকালে আইসিইউ থেকে বেডে নেওয়া হয়েছে।” বকেয়া টাকা নিয়ে সাজুর সঙ্গে বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে জিন জিং ইয়াং কোম্পানির ব্যবস্থাপক হাসিব বলেন, “টাকা নিয়ে ঝামেলা থাকবে কেন? সে মাল দিত, আমাদের কোম্পানি নিত। স্যার তো টাকা পয়সা বাকি রাখেন না।”
অ্যাপোলে হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার চিন্ময় ভট্টাচার্জ জানান, হকিস্টিক দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়েছে। মাথায় আঘাত পেয়েছেন ওয়াংলিচি। তাকে ভেন্টিলেশনে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে।